রাসূল(সা:) আল্লাহকে যেভাবে ভয় করতেন

প্রকাশঃ মার্চ ৪, ২০১৫ সময়ঃ ২:১৫ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ২:১৫ অপরাহ্ণ

ধর্ম চিন্তা ডেস্ক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

imageআল্লাহকে ভয় করে চলা এমন একটি ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য, যা অন্তরে যথাযথ প্রোথিত হলে জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন আনে।

আর এই পরিবর্তনটি আসে আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নির্দেশ মোতাবেক। সুদূর অতীতকালের একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি বলেছিলেন, ‘তুমি যখন অন্যদের ভয় পাও, তাদের থেকে দূরে পালিয়ে যাও।

আর যখন আল্লাহকে ভয় পাও, তখন তাঁর দিকেই তুমি ছুটে যাও।’

বাস্তবে রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন আল্লাহকে ভয় করার সত্যিকার প্রতীক।

তিনি সঠিকভাবেই ঘোষণা করেছেন, আল্লাহকে আমি জানি সবচেয়ে বেশি। আর তোমাদের মধ্যে আমিই তাঁকে সবচেয়ে বেশি ভয় করি।’ আল আলবানি এই হাদিসের যথার্থতা উল্লেখ করেছেন। আপনি আল্লাহ তায়ালা, তাঁর নিখুঁত গুণাবলি এবং সর্বপরি জ্ঞানভিত্তিক কাজ সম্পর্কে যত বেশি জানবেন, তত বেশি ভয়, ভক্তি ও শ্রদ্ধা করবেন তাঁকে। আপনি যত বেশি জানতে পারবেন আপনার অতি তুচ্ছ, নগণ্য ও পাপী সত্তার ব্যাপারে, ততই আল্লাহর ভীতি আপনার মনে প্রবল হয়ে উঠবে।

এ কারণে আল কুরআন সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করছে, আল্লাহকে তাঁর বান্দাদের মধ্যে কেউই প্রকৃতপক্ষে ভয় করে না, তারা ছাড়া যারা (আল্লাহর কথা ও কাজ সম্পর্কে) সম্যক জ্ঞানের অধিকারী (সূরা আল মুমিনুন, আয়াত ২৮)।

রাসূলুল্লাহ সা: আল্লাহকে যে ভয় করে চলতেন, তা তাঁর জীবনযাত্রায় অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হতো। আল্লাহতায়ালা যে সব কিছুর ওপর নজর রাখেন, সে বিষয়ে রাসূল সা: সচেতন থাকতেন সব সময়। তাঁর সজাগ হৃদয় প্রতি মুহূর্তেই আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পিত থাকত। রাসূল সা:-এর হৃদয়জুড়ে ছিল আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসা। এভাবে তিনি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। এসব কিছু বিস্তারিত লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন তাঁর প্রিয় সাহাবা বা সঙ্গীরা।

রাসূলুল্লাহ সা:-এর অন্তর এতটাই কোমল ছিল যে, কুরআন তিলাওয়াতের সময়ে তিনি কাঁদতেন আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্কীকরণের প্রতিক্রিয়ায়। তাঁর মাথার চুল পেকে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে রাসূল সা: জবাবে বলেছিলেন, সূরা হুদসহ যেসব সূরায় শেষ বিচারের দিনের আতঙ্কজনক ঘটনাগুলো বর্ণিত হয়েছে, সেগুলোর প্রভাবেই তাঁর চুল ধারণ করেছে ধূসরবর্ণ।

আল্লাহর ভয় ছিল রাসূল সা:-এর মনজুড়ে। তাই সেখানে অহঙ্কারের কোনো স্থান ছিল না এবং এই হৃদয় তাঁর মহান প্রভুর সকাশে ছিল অতিশয় বিনীত। এই প্রেক্ষাপটে রাসূলুল্লাহ সা: তাঁর উম্মতকে নিষেধ করে গেছেন, যাতে তারা তাঁর প্রশংসা ও মূল্যায়নে বাড়াবাড়ি বা সীমা লঙ্ঘন না করে। সহীহ বুখারিতে উল্লেখ রয়েছে তাঁর এই বাণী : ‘খ্রিষ্টানরা মরিয়মের সন্তানকে নিয়ে যা করেছে, তোমরা সেভাবে চরম পন্থা অবলম্বন কোরো না আমার প্রশংসা করতে গিয়ে। আমি (আল্লাহর) এক বান্দা মাত্র; তাই তোমরা বলবে (তিনি) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর বার্তাবাহক।’

ঝড়ঝঞ্ঝার সময়ে আকাশে মেঘ পুঞ্জীভূত হলে অথবা সূর্যগ্রহণ ঘটলে রাসূল সা:-এর মুখমণ্ডলে ফুটে উঠত ভীতির চিহ্ন। তখন তিনি দ্রুত আল্লাহর শরণাপন্ন হয়ে মাথা নত করতেন। এটা করতেন মহাবিশ্বের মহান প্রভুর প্রতি ভয়, শ্রদ্ধা ও ভক্তির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে। এসব প্রাকৃতিক বিপর্যয় তাঁকে মনে করিয়ে দিত যে, অতীতে আল্লাহর না-ফরমান জাতিগুলো প্রকৃতির দুর্যোগময় ঘটনা দ্বারাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

রাসূল সা: যে আল্লাহকে ভয় করতেন, তা কিন্তু দুর্বল বা ভিতু হৃদয়ের পরিচায়ক নয়। সঙ্গী-সাথীদের চেয়ে তিনি বেশি সাহসী ছিলেন। তাঁর এতই সাহস ছিল যে, যুদ্ধের ময়দানে তিনি শত্রুবাহিনীর সবচেয়ে নিকটবর্তী হতেও দ্বিধা করতেন না। রাসূল সা: আল্লাহকে যেভাবে ভয় করেছেন, তা হচ্ছে ভীতির আদর্শ ধরন। কারণ, এই ভীতির কারণে তিনি সন্ন্যাসীদের মতো কঠোর বৈরাগ্য অবলম্বন করেননি। এমনকি তাঁর উম্মতকে নিষেধ করে গেছেন সংসার ত্যাগের ব্যাপারে। তাঁর স্ত্রী-সন্তান ছিল, পছন্দ করতেন সুগন্ধি, কোনো কোনো খাবার তাঁর কাছে বিশেষ পছন্দনীয় ছিল। অবশ্য সাধারণত কখনো পরপর দু’দিন গমের রুটি দিয়ে ক্ষুধার পুরো নিবৃত্তি করতে পারেননি তিনি ও তাঁর পরিবার। অনেক সময়ে দিনের পর দিন তাঁর ঘরে খাবার রান্নার জন্য চুলা জ্বলত না।

এই প্রেক্ষাপটে আমরা স্মরণ করতে পারি তিনজন লোকের কাহিনী। তারা এসেছিলেন ইবাদতের ব্যাপারে রাসূল সা:-এর ত্যাগ, নিষ্ঠা ও শ্রম সম্পর্কে খোঁজ নিতে। তাঁর জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানতে পেরে এই তিন ব্যক্তি ভাবলেন, রাসূল সা: তো আগে থেকেই আল্লাহর ক্ষমাপ্রাপ্ত। কিন্তু তাদের গুনাহ মাফ করার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অতএব, তাদের আরো সাধারণ, আরো কৃচ্ছ্রপূর্ণ জীবনযাপন করতে হবে।’ তাই তাদের একজন ঘোষণা দিলেন, আমি ইবাদত বন্দেগি করে রাত কাটিয়ে দেবো এবং ঘুমাব না।’ আরেকজন ঠিক করলেন যে, ‘বিয়ে করবো না’। তৃতীয় ব্যক্তির ঘোষণা ছিল, ‘অব্যাহতভাবে রোজা রাখব।’

তাদের এসব সিদ্ধান্ত জানতে পেরে রাসূল সা: এভাবে চিন্তাভাবনা করার কারণে ভর্ৎসনা করলেন। তিনি জোর দিয়ে বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে আমি সবচেয়ে আল্লাহভীরু। তবুও আমি রোজা রাখি, আবার ভাঙিও। রাতের বেলায় ইবাদত করি, আবার ঘুমাই। আমি বিয়েশাদিও করেছি।’ রাসূল সাঃ এ কথার মাধ্যমে যে উপদেশ ও নির্দেশনা দিয়েছেন, সেটাই সর্বোত্তম।

নবীয়ে করীম সা:-এর জীবনযাত্রার এই যে নিদর্শন, এটা তাঁর অসাধারণ চরিত্রের বিস্ময়কর ভারসাম্যের নজির। আর এই দৃষ্টান্ত চিরদিনের জন্যই অনুসরণীয়।

প্রতিক্ষণ/এডি/ইসলাম

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G